Header Ads

Header ADS

বাংলাদেশের পাহাড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য ।

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক ভাবে আশীর্বাদ- পরিপূর্ণ দেশ কি নেই আমাদের সমুদ্র, নদী, দ্বীপ, পাহাড়, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, হেরিটেজ, মাল্টিকালচারাল জনসম্পদ

সঠিক ব্যবস্থাপনা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, হয়তো আমাদের অন্যতম জীবিকার উৎস হতো, ট্যুরিজম।
তবে আমার কাছে,সবচেয়ে আরাধ্য আমাদের পাহাড়ি অঞ্চল, ঠিকমতো পাহাড় দেখতে চাইলে, কয়েকবছরেও আমরা হয়তো দেখে শেষ করতে পারবো না আজকে আলোচনা করবো আমাদের দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার তিনটি প্রাকৃতিক লেক নিয়ে......

১। রিলিতে লেকঃ

রিলিতে লেক, রাংঙ্গামাটি

প্রমিত উচ্চতাঃ ১৮২৫-৮০ ফুট
গভীরতাঃ সঠিক ভাবে মাপা হয়নি, তবে মাঝ অংশে ১০০+/- ফুট।
অবস্থানঃ নং বড়থলী ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি, রাংগামাটি।
যাতায়াতঃ বান্দরবান এর রুমা উপজেলা থেকে পায়ে হাটা পথে,
. রুমাখাল - বগামুখপাড়া - এনুপাড়া - পুকুরপাড়া - প্রাঞ্জনপাড়া-চার্চিং পাড়া হয়ে এই লেকে পৌছানো সম্ভব।
. রুমা থেকে জিপে করে বগালেক হয়ে,আনন্দপাড়া-এনুপাড়া পর্যন্ত জিপে গিয়ে বাকিটুকু পায়ে হেটে।
.থাঞ্চি থেকে বাক্তলাইপাড়া জিপে-থাইক্যাং পাড়া-সুনসানপাড়া-শেপ্রুপাড়া-রিলিতে লেক।
.বগালেক-কেওকারাডং-থাইক্যাংপাড়া-রুমানা পাড়া(শীতকালে জিপে)-চার্চিংপাড়া-রিলিতে লেক।
মোটকথা,অনেক উপায়ে পৌছানো সম্ভব,কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি সাপেক্ষে

বাংলাদেশে এরচেয়ে অধিক উচ্চতায় অবস্থিত প্রাকৃতিক লেক,এখন অবদি আবিষ্কৃত হয় নি,নিঃসন্দেহে প্রায় -৪একর জায়গা নিয়ে এর অবস্থান চমৎকার এই পুকুরের অবস্থান প্রাকৃতিক শেওলা,ফার্ন,শালুক এর প্রাচুর্যে ভরপুর এই মিঠাপানির লেক,বৃষ্টির জমাট জল এর প্রধান জলের উৎস। 
এই লেকে,মাগুর মাছ,কালবাউশ,চিংড়ি স্থানীয় দের ছাড়া তেলাপিয়া মাছ পাওয়া যায়।
খুব কম মানুষের সৌভাগ্য হয়েছে এর সম্পর্কে জানা বাস্তবে দেখার।পুর্বে এর পাশে বিজিবি ক্যাম্প ছিলো,এখন পরিত্যক্ত

বগালেকঃ

বগালেক, বান্দরবান

প্রমিত উচ্চতাঃ ১২০০-১২৫০ফুট+/-
গভীরতাঃ এর গড় গভীরতা ১২৫+/-ফুট
অবস্থানঃবান্দরবানের রুমা উপজেলার ১৪কিলোমিটার পূর্ব দিকে।
পরিধিঃ প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান।
যাতায়াতঃ রুমা উপজেলা থেকে যে-কোন যানবাহনে পৌছানো সম্ভব

বগাকাইন হ্রদ বা বগা হ্রদ বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির একটি হ্রদ। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বগাকাইন হ্রদের অবস্থান কেওকারাডং পর্বতের গা ঘেষে, রুমা উপজেলায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ,২৪৬ ফুট (৩৮০ মিটার) ফানেল বা চোঙা আকৃতির আরেকটি ছোট পাহাড়ের চুড়ায় বগা হ্রদের অদ্ভুত গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো।
বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিকগণের মতে বগাকাইন হ্রদ মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। এটি ভুবন স্তরসমষ্টির নরম শিলা দ্বারা গঠিত। 
বগা হ্রদের পানি অত্যন্ত সুপেয়, এবং হ্রদের জলে প্রচুর শ্যাওলা, শালুক, শাপলা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ এবং প্রচুর মাছ এমনকি বিশালাকার মাছ রয়েছে।
ইতিহাসঃ
বগাকাইন হ্রদ সৃষ্টি নিয়ে বম, মারমা, ম্রো, খুমি ত্রিপুরাদের পৌরাণিক কাহিনি বা কিংবদন্তি রয়েছে। এমন একটি পৌরাণিক কাহিনি হল বগাহ্রদের পাশে একটি বম পাড়া (বগামুখপাড়া) এবং একটি মুরং পাড়া আছে। স্থানীয় আদিবাসীরা বম, মুরং বা ম্রো, তঞ্চংগ্যা এবং ত্রিপুরাসহ অন্যান্য আদিবাসী। স্থানীয় আদিবাসীদের উপকথা অনুযায়ী, অনেক কাল আগে পাহাড়ের গুহায় একটি ড্রাগন বাস করতো। বম ভাষায় ড্রাগনকে "বগা" বলা হয়। ড্রাগন-দেবতাকে তুষ্ট করতে স্থানীয়রা গবাদী পশু উৎসর্গ করতেন। কিন্তু একবার কয়েকজন এই ড্রাগন দেবতাকে হত্যা করলে চূঁড়াটি জলমগ্ন হ্রদে পরিণত হয় এবং গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। যদিও এই উপকথার কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই, তবুও উপকথার আগুন উদগীরণকারী ড্রাগন বা বগা এবং হ্রদের জ্বালামুখের মতো গঠন মৃত আগ্নেয়গিরির ধারণাটির সাথে মিলে যায়

অপর এক পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়েছে বগা লেক ছিল একটি সমৃদ্ধ ম্রো গ্রাম। গ্রামের পাশে একটি সুড়ঙ্গে বড় আকারের সাপ থাকত। এক দিন ওই সাপ গ্রামবাসী ধরে খেয়ে ফেলে। ওই সাপ খাওয়ায় নাগরাজার প্রতিশোধের কারণে গ্রামবাসীসহ গ্রামটি দেবে গিয়ে বগা লেকের সৃষ্টি হয়। এখনো অনেক বম, ম্রোর বিশ্বাস, হ্রদের গভীরে থাকা নাগরাজ লেজ নাড়ালে হ্রদের পানি ঘোলাটে হয়ে ওঠে

. রাইক্ষ্যাং লেকঃ

রাইক্ষ্যাং লেক, রাংঙ্গামাটি

প্রমিত উচ্চতাঃ ১১০০-১১৫০+/- ফুট
গভীরতাঃ ১০০+/- ফুট
আয়তনঃ ৮৪-৮৭হেক্টর
অবস্থানঃ পুকুর পাড়া৪নং বড়থলী ইউনিয়নবিলাইছড়িরাংগামাটি

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক লেক রাইক্ষ্যাং লেকের রুপ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে অপুর্বতম প্রাকৃতিক আশ্চর্য। এই বিশাল লেকের মুগ্ধকর অবস্থান,দেশের যে কোন পর্যটন ক্ষেত্রের চেয়ে অনেক বেশী প্রাকৃতিক। চোখ জুড়ানো এই সৌন্দর্য যে দেখেনি,নিঃসন্দেহে সে বাংলাদেশ দেখেনি।
এই লেকের দু পাশের দুটি পাহাড়ী পাড়া,পশ্চিমের পুকুর পাড়া পুর্বের প্রায়ংপাড়ার অবস্থান এর অপুর্বতা বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই বিশালাকৃতির লেকের যেকোনো এক বিকাল হতে পারে কোন অভিযাত্রির জীবনের সেরা মুহুর্ত। 
এই লেক সীমান্ত থেকে মাত্র কিলোমিটার দুরে। 
আশপাশের মানুষের জীবিকার মুল উৎস কৃষিকাজ,
এখানকার জনবসতির ৯০% ত্রিপুরা বাকি ১০% তঞ্চংগ্যা। লেকের পুর্বে পাশে রাইক্ষ্যাং বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর এক পাহাড়ি নদীর নামানুসারেই এই লেকের নামকরন।
লেকে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ সহ,রয়েছে শোল,মাগুর,রুই,কাতল,কালিবাউশ,তেলাপিয়া অন্যান্য মাছের প্রাচুর্য। মিঠা পানির এই লেকে,মাছধরায় কোন বিধিনিষেধ না থাকায়,স্থানীয় রা ভেলা বেয়ে কিংবা জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকেন,তাদের আমিষের উৎস হিসেবে। লেকের পশ্চিম পাড়ের পুকুরপাড়া আর্মি ক্যাম্প যেসব বাংগালী রা বসবাস করেন তাদের নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান বলা যায়,তাদের কর্মক্ষেত্র হিসেবে।
অথচ ২০১৫ সালের আগে পর্যটক দের সাময়িক আনাগোনা থাকলেও এখন সেখানে যাবার জন্য বেসামরিক বাংগালী দের অনুমতি নেই।
যারা ইতিপূর্বে এই লেকের রুপ অবলোকন করতে পেরেছেন,তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান।
এর পুর্বে অবস্থিত দেশের ৩য় বৃহত্তম পাহাড়,দুমলং।
আর এটি বাংলাদেশ ভারতের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত

তিনটি লেক/হ্রদের মধ্যেই একটা রহস্যময় বৈশিষ্ঠ বিদ্যামান আর তা হচ্ছে পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনওবা ঘোলাটে হয়ে যায়। 
আর এটা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যনীয়। 
কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়।
তবে সাধারণত সচ্ছ থাকে

ক্রেডিটঃ Taufique Tamal

 


No comments

Powered by Blogger.